সোমবার, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২৪
১লা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কুড়িগ্রামে ১০ম শ্রেণির ছাত্রের তৈরি টেলিস্কোপ দেখতে জনতার ভীড়

কুড়িগ্রামে ১০ম শ্রেণির ছাত্রের তৈরি টেলিস্কোপ দেখতে জনতার ভীড়

মোবাশ্বের নেছারী কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামের রাজারহাটের পল্লীতে ফাহাদ আল ফারাবী (১৬) নামের এক ১০ম শ্রেণির ছাত্র টেলিস্কোপ বানিয়ে এলাকায় দারুণ সাড়া ফেলেছেন। সে রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। এবং উপজেলার মেকুটারী গ্রামের জয়নুল আবেদীন ও পারভীন খন্দকারের ছোট ছেলে।
পোষা বিড়ালের নামে টেলিস্কোপটির নাম দিয়েছেন ঘঊকঙ-ক-১। ফারাবী তার মেধা ও বিজ্ঞান কাজে লাগিয়ে ঘরে বসে টেলিস্কোপ বানানোর এমন প্রতিভা দেখে খুশি স্বজনরা। টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ-সূর্য্যের স্পষ্ট ছবি দেখতে প্রতিদিন লোকজন ভীড় করছে। ফারাবী ছোট বেলা থেকে মহাকাশ সম্পর্কে জানতে খুবই আগ্রহী ছিল। স্বচক্ষে গ্রহ-নক্ষত্র-উপগ্রহের অবস্থান দেখার খুব আগ্রহ ছিল। এরপর ২০২১ সালের শেষের দিকে টেলিস্কোপ বানানো, সরঞ্জাম সংগ্রহে নেমে পড়ে। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন, টেলিস্কোপ কিনতে পাওয়া যায়। বাজারে একটি টেলিস্কোপের মূল্য প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। শিক্ষার্থী হয়ে তার পক্ষে এত টাকা সংগ্রহ করতে পারবে না বলেই ২০২৩ সালে নিজেই টেলিস্কোপ বানানোর কাজ শুরু করে। এ কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছিলেন ফাহাদ আল ফারাবী’র বড় ভাই ফাহমিদ আল জাবের। তিন মাসের মধ্যে টেলিস্কোপ বানাতে পেরে খুশি ফাহাদ আল ফারাবী। ফাহাদ আল ফারাবীর ইচ্ছে সরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে টেলিস্কোপে আগ্রহীদের মাঝে স্বল্প দামে সরবরাহ করতে পারবেন। ফাহাদ আল ফারাবীর সাথে কথা হলে সে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমার ইচ্ছে ছিল মহাকাশ নিয়ে কাজ করার। এস্টোনমি ইন্সট্রমেন্ট না থাকায় কাজ করতে পারি নাই। ২০২৩ সালে ঢাকার এক এস্ট্রনোমি হাউজ থেকে যন্ত্রপাতিগুলো সংগ্রহ করে টেলিস্কোপটি বানাতে সক্ষম হই।’আরো বলেন, ‘টেলিস্কোপটি তৈরি করতে মূলত পিভিসিপাইপ, লেন্স, মাউন্ট, ফোকাল, এ্যাপারচার, মিরর, ফোকাস মেটাল থ্রি ডি স্পাইডার ও কাঠের প্রয়োজন হয়েছে। টেলিস্কোপটির ওজন মাত্র ১২ কেজি। এটির মাধ্যমে ৩ লাখ কিঃমিঃ দূর থেকে দৃশ্য ধারণ করা যায়। ভবিষ্যৎ আরো উন্নত টেলিস্কোপ ও মাইক্রোস্কোপ বানানোর ইচ্ছে আছে। এছাড়া সরকারি কোন সহযোগিতা পেলে মানুষের কাছে স্বল্পদামে টেলিস্কোপ পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করবো। ‘তার বাবা জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ফারাবী যখন টেলিস্কোপ বানানোর কাজ শুরু করেন তখন কিছুটা বিরক্তি লেগেছিল। অবসর সময়ে বাইরে বন্ধুদের সাথে আড্ডা না দিয়ে ঘরে বসে এসব তৈরি করতে ব্যস্ত থাকায় ভালো লাগতে শুরু করে। ফারাবী দাবা খেলায় খুবই পারদর্শী। জেলা পর্যায়ে ও রাজধানীতে দাবা খেলে নগদ অর্থ পুরস্কার পেয়েছে। সেই অর্থ দিয়ে টেলিস্কোপ বানানো শুরু করলে আমি তাকে বাড়তি কিছু টাকা দিয়ে সহযোগিতা করি। টেলিস্কোপটি বানাতে খরচ হয়েছে মাত্র ১৭ হাজার টাকা। এই মানের টেলিস্কোপ বাজারে ৪০-৫০ হাজার টাকা। ফারাবী আরো ভালো কিছু করুক এ প্রত্যাশা সব সময়।’ ফারাবীর বন্ধু রাফিউল ইসলাম রাব্বি বলেন, ‘ফারাবী কোন বাজে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায় না। টেলিস্কোপ বানানোর কাজে প্রায় সময় পাশে ছিলাম। যেদিন টেলিস্কোপের মাধ্যমে চাঁদ-সূর্য খালি চোখে স্পষ্ট দেখলাম খুবই ভালো লেগেছে।’ রাজারহাট পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, ‘ফাহাদ আল ফারাবী ভালো ছাত্র। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্রিয়েটিভ কাজে তার আগ্রহ বেশি। ফারাবী আরো ভালো করুক এ কামনা করছি।’ রাজারহাট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাঃ আয়শা সিদ্দিকা বলেন, ‘ফাহাদ আল ফারাবী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। সে পড়াশোনার পাশাপাশি দাবা খেলায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। এ বয়সে বাইরে আড্ডা না দিয়ে ঘরে বসে মেধার বিকাশ করতে টেলিস্কোপ বানানোর কাজটি খুবই প্রশংসনীয়। সরকারি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে ফারাবীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবো।’

থেকে আরও পড়ুন

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার সময় সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু, শ্যামল দত্তসহ চারজনকে...

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে গোষ্ঠীস্বার্থ নয়, জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিনিধিত্ব করতে হবে। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে যে...

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা...

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।...