বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। সোমবার ২৪শে এপ্রিল বঙ্গভবনে শপথ বাক্য পাঠ করিয়েছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করলেন ৭৩ বছর বয়সী মি. সাহাবুদ্দিন।
এর আগে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
শপথ পাঠ শেষ হওয়ার পর বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মোঃ আব্দুল হামিদ নতুন রাষ্ট্রপতিকে অভিনন্দন জানান। এরপর তারা আনুষ্ঠানিকভাবে চেয়ার বদল করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন।
যা জানা যাচ্ছে ২২তম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন সম্পর্কে
গত ১২ই ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রথমবারের মতো মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনকে পরিচয় করিয়ে দেন।
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন পেশায় একজন আইনজীবী এবং তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের একজন সদস্য।
তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।
তিনি ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেন এবং ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব হিসেবে নির্বাচিত হন।
তাকে ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পর ফেব্রুয়ারিতে তিনি ওই পদ থেকে পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত মি. সাহাবুদ্দিন ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য বলছে, নতুন রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ১৯৪৯ সালের ১০ই ডিসেম্বর পাবনা শহরে জন্মগ্রহণ করেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের রাজনৈতিক পরিচয়
ছাত্র জীবনে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
পরে পাবনা শহীদ আমিনুদ্দিন আইন কলেজ থেকে এলএলবি পাস করেন।
১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের পর সামরিক আইনে তিনি তিন বছর কারাগারে বন্দি ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি শেখ মুজিব হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তিনি ১৯৮০-১৯৮২ সাল পর্যন্ত দৈনিক বাংলার বাণীর সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেন।
মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ২০০৬ সালে শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান,
এবং ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা, হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠন ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ অনুসন্ধানে গঠিত বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেব দায়িত্ব পালন করেছেন।
নতুন রাষ্ট্রপতি মোহাম্দ সাহাবুদ্দিন ২০২০ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
তিনি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সর্বশেষ ২০২২ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
চাকরির সময়কালে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সদস্য, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে মোহাম্দ সাহাবুদ্দিন এক পুত্র সন্তানের বাবা এবং তার স্ত্রী প্রফেসর ড. রেবেকা সুলতানা সরকারের সাবেক যুগ্ম সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
মো. আবদুল হামিদের বিদায়
বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দ্বিতীয় পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করেছেন আবদুল হামিদ।
স্বাধীনতার পর থেকে ১৭ জন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে মো. আবদুল হামিদ পরপর দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনিই বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দিন দায়িত্ব পালন করা রাষ্ট্রপ্রধান।
তিনি প্রথম দফায় রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন ২০১৩ সালের ২৪শে এপ্রিল। এরপর ২০১৮ সালের ২৪শে এপ্রিল তিনি দ্বিতীয়বারের মত রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন। রোববার তার মেয়াদ শেষ হল।
সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর মি. হামিদ ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসাবে ৪১ দিন ক্ষমতায় ছিলেন এরপর দুই মেয়াদ মিলে টানা ১০ বছর ৪১ দিন রাষ্ট্রপতির পদে ছিলেন তিনি।
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা হস্তান্তরের পর মি. হামিদ ঢাকার তার নিজ বাসভবনে উঠবেন বলে জানা গিয়েছে।