তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প একের পর এক আঘাত হেনেছে। আক্ষরিক অর্থেই কেঁপে উঠছে তুরস্ক ও সিরিয়া।
আজ সোমবার ভোরের ভূমিকম্পের ১২ ঘণ্টা না পেরোতেই আরেকটি বড় ধরনের ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
রিখটার স্কেলে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। ইউরোপিয়ান মেডিটেরিয়ান সিসমোলজিক্যাল সেন্টার (ইএমএসসি) জানিয়েছে, তুরস্কের কাহরামানমারাশ থেকে ৬৭ কিলোমিটার দূরে ২ কিলোমিটার গভীরে ছিল এই ভূমিকম্পনের উৎপত্তিস্থল।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের দেওয়া তথ্য অনুসারে এই ভূকম্পনের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৫।
আর তুরস্কের ডিজাস্টার অ্যান্ড ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট অথরিটি বলেছে, এই ভূকম্পনের মাত্রা ৭ দশমিক ৬।
তাদের হিসাব অনুসারে এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থলের গভীরতা আরও বেশি ছিল।
যুক্তরাজ্যের গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, এই ভূমিকম্পের পর সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কেও এই ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে।
তবে সেখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি। এ ছাড়া তুরস্কের ওই অঞ্চল থেকেও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে তুরস্কে আজ ভোরে যে ভূকম্পন আঘাত হেনেছে, সেটিতে তুরস্ক ও সিরিয়ায় মৃত্যুর সংখ্যা দেড় হাজার ছাড়িয়েছে।
আহত হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ। তবে ঠিক কত মানুষ মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে, সে তথ্য এখনো জানা যায়নি।
এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো থেকে হতাহতের সঠিক খবরও জানতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে ভূমিকম্পের সঠিক চিত্র এখনো উঠে আসছে না।
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্প , মৃত্যু বেড়ে ১৭৯৭

শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় প্রায় দুই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও অসংখ্য মানুষ। বহু মানুষ এখনো নিখোঁজ।
এসব মানুষের বেশির ভাগই ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ভূমিকম্পে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারে উদ্ধারকর্মীদের অভিযান চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার (ইউএসজিএস) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্থানীয় সময় সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে।
রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্পটি যখন আঘাত হানে, তখন বেশির ভাগ মানুষ ঘুমাচ্ছিলেন।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে অন্তত ১ হাজার ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে তুরস্কে। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন শহরে অনুসন্ধান ও উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে।
তবে বাদ সেধেছে প্রতিকূল আবহাওয়া। শীতকালীন তুষারঝড়ের কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। তুষারে অনেক সড়ক ঢেকে গেছে।
এদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সিরিয়ার সরকার, হাসপাতাল ও উদ্ধারকর্মীরা ভূমিকম্পে ৭৮৩ জনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ভূমিকম্পে সিরিয়ার আলেপ্পো, হামা, তারতুস প্রদেশে অসংখ্য ভবন ধসে পড়েছে। আতঙ্কিত মানুষজনকে ছোটাছুটি করতে দেখা যাচ্ছে।
পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট বিপজ্জনক, আগেই সতর্ক করেছিলেন বিজ্ঞানীরা
তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায় শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দুই দেশ।
এরই মধ্যে ভূমিকম্পে ১ হাজার ৪০০–এর বেশি মানুষের মৃত্যুর খবর এসেছে।
তুরস্ক–সিরিয়া ছাড়াও আশপাশের দেশগুলো এই ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছে। এটা এত শক্তিশালী ছিল, ভূমিকম্প টের পাওয়া গেছে উত্তর আমেরিকার দ্বীপদেশ গ্রিনল্যান্ডেও।
ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল সিরিয়ার সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে।
এর মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়া—দুই দেশেই প্রাণহানির সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।
ভূপ্রাকৃতিক কারণে অঞ্চলটি যে বিপজ্জনক, তা অবশ্য অনেক আগে থেকেই বলে আসছেন বিজ্ঞানীরা।
বিবিসি ও আল–জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আজকের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূপ্রাকৃতিক দিক অস্থিতিশীল এক অঞ্চলে।
এখানে রয়েছে পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট। তুরস্কের দক্ষিণ–পূর্ব সীমান্তের দক্ষিণ পশ্চিম থেকে উত্তর পশ্চিম বরাবর এই ফল্টের অবস্থান।
কোনো স্থানে ভূকম্পনের জন্য ফল্ট লাইনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভূত্বকের বিশাল খণ্ডকে টেকটোনিক ফল্ট বলা হয়। আর দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট লাইন বলা হয়।
পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্টের অবস্থান অ্যারাবিয়ান প্লেট ও আনাতোলিয়ান প্লেটের মাঝে। ফল্ট লাইন দিয়ে দুই প্লেটের সংঘর্ষ হলে ভূমিকম্প হয়।
বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পের জন্য দায়ী এই পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট।
পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্টকে বহু আগে থেকেই খুবই বিপজ্জনক উল্লেখ করে সতর্ক করে আসছেন ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা।
যদিও গত ১০০ বছরের বেশি সময়ে সেখানে কোনো উল্লেখযোগ্য সক্রিয়তা দেখা যায়নি।
তবে তুরস্কের ইতিহাসে ভয়াবহ বেশ কয়েকটি ভূমিকম্পের জন্য দায়ী এই পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট।
বলা যায়, ১৮৮২ সালের ১৩ আগস্টের ভূমিকম্পের কথা। রিখটার স্কেলে ওই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪, অর্থাৎ আজকের কম্পনের চেয়ে সামান্য কম। ওই ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
তুরস্কের আলেপ্পো শহরে ৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। আর ওই ভূমিকম্পের জেরে পরের প্রায় এক বছর ধরে ওই অঞ্চলে ছোট ছোট কম্পন হয়েছিল।
বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোর একটি তুরস্ক। পূর্ব আনাতোলিয়ান ফল্ট ছাড়াও দেশটির উত্তরে নর্থ আনাতোলিয়ান ফল্ট নামের আরেকটি ফল্ট রয়েছে।
১৯৯৯ সালে তুরস্কের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার এক ভূমিকম্পে ১৭ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
এর আগে ১৯৩৯ সালে দেশটির এরজিনকান প্রদেশে এক ভূমিকম্পে মৃত্যু হয় ৩০ হাজারের বেশি মানুষের।