বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর নিজ বাসা থেকে জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে সাদা পোশাকে থাকা পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
পরে তাকে যাত্রাবাড়ী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা একটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বিকেলে তাকে আদালতে হাজির করে পুলিশ।
এ সময় আদালত অঙ্গনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের গেট থেকে কোর্ট হাজত পর্যন্ত পুলিশের বেষ্টনী তৈরি করা হয়।
সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মো: আবুল বাসার। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ
এ দিকে দলীয় প্রধানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জামায়াত। এ সময় বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ডা: শফিকুর রহমানকে গ্রেফতারের প্রতিবাদও জানিয়েছে।
পুলিশের বক্তব্য :
জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান ছেলের জঙ্গি কার্যক্রমে সহযোগিতা করেছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ জন্য তার ছেলের বিরুদ্ধে দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় তাকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।
ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামান।
পুলিশের এ কর্মকর্তা দাবি করেন, ছেলে নতুন জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছেন এটা জেনেও সমর্থন দিয়ে গেছেন জামায়াত আমির। এক পর্যায়ে তার ছেলে ওই জঙ্গি সংগঠন সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়ক হন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডা: শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির একটি দল।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, গত ৯ নভেম্বর জামায়াত আমিরের ছেলে ডা: রাফাত সাদিক সাইফুল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। তারও আগে সিলেট থেকে হিজরত করা তিন জঙ্গি সদস্যকে যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি বলেন, এর আগে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম সিলেট অঞ্চলের প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন জামায়াত আমিরের ছেলে ডা: রাফাত। পরে ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র দাওয়াত পেয়ে দলবলসহ তাতে যুক্ত হন তিনি।
আসাদুজ্জামান দাবি করেন, ডা: রাফাত পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তার বাবার সম্মতিক্রমেই ২০২১ সালের জুন মাসে বান্দরবান থেকে ফিরে আসেন তিনি। রাফাত যে হিজরত করেছেন এর সবই জানতেন জামায়াত আমির। ক্ষেত্র-বিশেষে তিনি সহযোগিতাও করেছেন। হিজরতের যাবতীয় ব্যয়ভারও তিনি বহন করেছিলেন।
গ্রেফতার হয়েও কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের আমির
গ্রেফতার ও রিমান্ড সত্ত্বেও আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঘোষিত কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতের আমির ডা: মো: শফিকুর রহমান। গতকাল বিকেলে রিমান্ড শুনানি শেষে তার আইনজীবী মতিউর রহমান আকন্দ এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, জামায়াতের আমির আমাদের জানিয়েছেন তিনি ভালো আছেন। তিনি দেশবাসীকে সালাম জানিয়েছেন। তা ছাড়া আগামী ২৪ ডিসেম্বর ঘোষিত গণমিছিল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছেন।
পাবলিক প্রসিকিউটরের বক্তব্য
জামায়াতসহ বিরোধী দলগুলোর কার্যক্রম এবং ঢাকার আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু।
জামায়াতের আমির ডা: মো: শফিকুর রহমানের রিমান্ড শুনানি শেষে ব্রিফিংকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আব্দুল্লাহ আবু বলেন, আনসার আল ইসলামের দু’জন সদস্যকে এ আদালত থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। যেহেতু জামায়াত আমিরের ছেলে ডা: রাফাত আনসার আল ইসলাম সিলেট অঞ্চলের সমন্বয়ক। এ মামলায় গ্রেফতার অন্য তিন আসামির স্বীকারোক্তিতে রাফাতের কথা বলেছেন। এতে প্রমাণিত হয় জামায়াতসহ অন্য স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনগুলোর সহায়তায় একটি গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করা এবং একটি নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে।
জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান গ্রেফতার হওয়ায় দলটির নায়েবে আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত আমির করা হয়েছে।
দলের প্রচার সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ জানান, ডা: শফিকুর রহমান কারাবন্দী হওয়ায় সংগঠনের আমিরের দায়িত্ব পালন তার পক্ষে সম্ভব নয়।
এ জন্য ডা: শফিকুর রহমান আইনজীবীদের মাধ্যমে অধ্যাপক মুজিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় জামায়াতের প্রতিবাদ
ডা: শফিকুর রহমানকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান এক বিবৃতিতে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ জিজ্ঞাসাবাদের নামে এবং তাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে। আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন, যা উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থী।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ডা: শফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
কোনো গোপন সংগঠনের সাথে তার কোনো সম্পর্ক, সংশ্লিষ্টতা নেই। জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাজনীতি করে।
ডা: শফিকুর রহমানের সব তৎপরতা প্রকাশ্য।
তিনি বিগত বন্যায় সিলেটসহ সারা দেশে বন্যার্তদের মাঝে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে তিনি তাৎক্ষণিক জরুরি আর্থিক ও ত্রাণ সহায়তা এবং গৃহ সামগ্রীসহ ব্যাপক পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
পঞ্চগড়ের নৌকা ডুবিতে নিহত অমুসলিমদের পাশে তিনি আর্থিক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
তার এ সব মানবিক ও সামাজিক ত্রাণ তৎপরতা জাতীয় গণমাধ্যম এবং সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়েছে।
বিবৃতিতে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ১০ ডিসেম্বর যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর এ আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করা এবং জামায়াত নেতাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্যই তাকে গ্রেফতার করে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে।
আমরা স্পষ্ট ভাষায় জানাতে চাই, গ্রেফতার, হয়রানি, জেল-জুলুম ও নির্যাতন চালিয়ে জনগণের আন্দোলন দমানো যাবে না।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানিয়েছে
জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমানকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।
কর্নেল অলি :
লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ড. কর্নেল (অব:) অলি আহমদ বীর বিক্রম এক বিবৃতিতে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির একজন নম্র, ভদ্র, বিনয়ী ও সজ্জন ব্যক্তি।
তার মতো একজন ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদকে গভীর রাতে বেআইনি ও পরিকল্পিতভাবে গ্রেফতার করার বিষয়টি ন্যক্কারজনক।
নিশিরাতের সরকার তাকে গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশে অস্থিরতা এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক পরিবেশ ঘোলাটে করার চেষ্টা করছে।
কর্নেল অলি বলেন, এ সরকারের আমলে ঘরে বসে রাজনীতি করারও সুযোগ নেই। বিরোধীদল শূন্য করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে তারা গ্রেফতার কৌশল কাজে লাগাচ্ছে।
গ্রেফতার, খুন ও গুমের আতঙ্ক এখন সর্বত্র পরিব্যাপ্ত। সুষ্ঠু পরিবেশ অস্থিতিশীল করতে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে জামায়াতের আমিরকে গ্রেফতার করেছে সরকার।
তিনি আরো বলেন, সরকার এ গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশে চলমান রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
ভয়-ভীতি দেখিয়ে, মামলা-হামলা দিয়ে জনগণের এ আন্দোলন বন্ধ করা যায় না। এ সময় তিনি জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
জাগপা:
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গভীর রাতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা’র সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান।
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকার তাদের শেষ রক্ষার তাগিদে বিনা উসকানিতে মজলুম মানুষের প্রিয় মানুষ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানকে গভীর রাতে গ্রেফতার করেছে।
সরকারের এ ধরনের আচরণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি সরকারকে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের উপর নগ্ন ও ফ্যাসিবাদী হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অবিলম্বে জামায়াত, বিএনপিসহ অন্যান্য দলের গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মীকে শর্তহীন মুক্তি দিন, অন্যথায় ক্ষমতার দাপট পলায়নে পরিণত হবে।
লেবার পার্টি :
ডা: শফিকুর রহমানকে গ্রেফতার ও নিপীড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি।
একযুক্ত বিবৃতিতে লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা: মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লায়ন ফারুক রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান এস ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম রাজু, হিন্দুরত্ম রামকৃষ্ণ সাহা বলেন, সরকার বিরোধী মত ও পথের সবাইকে গ্রেফতার, হামলা মামলা নির্যাতন নিপীড়ন করে দমিয়ে রাখতে চায়।
তারা ১০ দফার যুগপৎ আন্দোলন বাধাগ্রস্ত করতে অগণতান্ত্রিক পন্থা বেছে নিয়েছে। জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান, মির্জা ফখরুল ইসলাম ও রিজভী আহমেদরা সজ্জন ও মুক্তমনা ব্যক্তি।
তাদেরকে গ্রেফতার করে কণ্ঠ রোধে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম স্তব্দ করা যাবে না।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে যুগপৎ আন্দোলনের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদসহ সব রাজবন্দীর মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করে তাদেরকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
ইসলামী আন্দোলন :
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদ গতকাল এক সভায় বলেন, স্বাধীন একটা দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের এভাবে গ্রেফতার করা রীতিমতো অভদ্রতা এবং দমনমূলক রাজনীতির নিকৃষ্টতম উদাহরণ। এটা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।
তিনি বলেন, অবিলম্বে তাদের মুক্তি দিন এবং দায়েরকৃত হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার করুন। সবাইকে সুস্থ, স্বাধীন রাজনীতি করার সুযোগ করে দিন।
শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন : বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা ডা: শফিকুর রহমানকে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ খান ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান।
এক যৌথ বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ডা: শফিকুর রহমানকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
ছাত্রশিবির : ডা: শফিকুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির।
এক যৌথ বিবৃতিতে ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাশেদুল ইসলাম ও সেক্রেটারি জেনারেল রাজিবুর রহমান বলেন, অবৈধ ক্ষমতা হারানো ও নিজেদের সীমাহীন অপকর্মের ভয়াবহ পরিণতির ভয়ে স্বৈরাচারী সরকার ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। ফলে একের পর এক কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজ করে যাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও দেউলিয়াত্বের নিকৃষ্ট নজির স্থাপন করল অবৈধ আওয়ামী সরকার।
শিবির নেতারা জুলুম-নির্যাতন বন্ধ করে ডা: শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ সব নেতাকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান।
রাজধানীতে বিক্ষোভ
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা মৌচাক মার্কেটের সামনে থেকে শুরু হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে মালিবাগ রেলগেটে প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, দেলওয়ার হোসেন, অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন প্রমুখ।
কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে অপর একটি বিক্ষোভ মিছিল মিরপুর ১০ নং গোল চত্বর থেকে শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে শেওড়া পাড়া গিয়ে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন লস্কর মো: তসলিম, মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা ও ডা: ফখরুদ্দীন মানিক, জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দীন, আতাউর রহমান প্রমুখ।
মিছিল শেষে ফেরার পথে পুলিশ ৮ জনকে গ্রেফতার করে।
রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে রাজশাহীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
গতকাল দুপুরে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের উদ্যোগে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। তবে জামায়াতের প্রতিবাদ সমাবেশের শেষের দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া শুরু হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টাকালে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মধ্যে পড়ে এক পুলিশ সদস্য সামান্য আহত হন।
নগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের রাজশাহী মহানগর সেক্রেটারি ইমাজ উদ্দিন মণ্ডল, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আব্দুস সামাদসহ অন্য নেতৃবৃন্দ।
চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াত।
কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমীনের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে এক প্রতিবাদ সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নগর জামায়াতের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ উল্লাহ, এফ এম ইউনুছ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালীসহ নগর জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
বিক্ষোভ মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে অধ্যক্ষ নুরুল আমীন বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের কবল থেকে জনগণকে মুক্তির ১০ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করার পরপরই ফ্যাসিস্ট সরকার চৈতন্য হারিয়ে ফেলেছে।
খুলনায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল
খুলনা মহানগরী জামায়াতের উদ্যোগে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে সভাপতিত্ব করেন মহানগরী আমির অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন নায়েবে আমির অধ্যাপক নজিবুর রহমান, নগর সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল, সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট শাহ আলম ও শেখ জাহাঙ্গীর আলম, আজিজুল ইসলাম ফারাজী, মাওলানা শেখ অলিউল্লাহ, ছাত্রশিবির সেক্রেটারি তৌহিদুর রহমান প্রমুখ।
শেষে জামায়াত আমিরের মুক্তি দাবি জানিয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।
এ সময় নেতৃবৃন্দ বলেন, আমিরে জামায়াতকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে সরকার গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পথ রুদ্ধ করছে। সরকারের এই প্রতিহিংসার কর্মকাণ্ডে দেশের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজপথে নেমে এসেছে।
তাই হাজারো মামলা আর গণগ্রেফতার করে আন্দোলনকে ঠেকানো যাবে না।
সিলেটে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
মঙ্গলবার বিকেলে নগরীর আম্বরখানা এলাকায় সিলেট মহানগর জামায়াত আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল-পরবর্তী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেছেন, ক্ষমতাসীন সরকার তাদের অবৈধ শাসন পাকাপোক্ত করতে গোটা দেশকে একটি বৃহৎ কারাগারে পরিণত করেছে।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের ১০ দফা ঘোষণায় সরকার ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
হামলা-মামলা, গ্রেফতার নির্যাতন চালিয়ে ইসলামী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার সাধ্য কারো নেই।
অবিলম্বে আমিরে জামায়াত ডা: শফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পারওয়ারসহ কারান্তরীণ সব রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
মহানগর সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সিলেট জেলা উত্তর জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আব্দুর রব, অ্যাডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, মুফতি আলী হায়দার, মু. আজিজুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সিলেট মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল ফারুক প্রমুখ।