বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৭, ২০২৩
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

 

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি:

চোর সন্দেহে এক যুবককে ব্যাপক মারপিট করে সারারাত কাঁচারিঘরের খুঁটিতে বেঁধে রেখেছিলেন গ্রামবাসী। খবর পেয়ে তার স্ত্রী দ্রুত ছুটে যান কাঁচারিবাড়িতে। গিয়ে দেখেন স্বামীকে খুঁটিতে বেঁধে রেখে পাহাড়া দিচ্ছেন গ্রামবাসী। এসময় স্বামী বারবার পানি পানি করছিলেন। কিন্তু গ্রামবাসী পানিও খেতে দেননি, হাসপাতালে নেননি। আবার স্ত্রীকেও হাসপাতালে নিতে দেননি। পরে ভোররাতে ওই যুবকের মৃত্যু হয়।

সোমবার দিবাগত রাতে কুষ্টিয়ার খোকসা ও পাংশা উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় মেঘনা গ্রামের কাচারিবাড়ি এলাকায় এঘটনা ঘটে।

নিহত যুবক ফজল শেখ (৪০) খোকসা উপজেলার আমবাড়িয়া ইউনিয়নের সেনগ্রামের মৃত চৌধুরী শেখের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ভ্যান-সাইকেল মেকারী ও দুই সন্তানের জনক।

মঙ্গলবার সকালে তার নিজ বাড়ি থেকে মরদেহ উদ্ধার করে খোকসা থানা পুলিশ। পরে সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

নিহতের স্বজনরা জানায়, রাত নয়টার দিকে মুঠোফোনে কল পেয়ে ফজল বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। এরপর রাত একটার দিকে বাড়িতে খবর আসে কাচারিবাড়ির খুঁটিতে বেঁধে গ্রামবাসী মারপিট করছেন। খবর পেয়ে তাঁর স্ত্রী নার্গিস খাতুন দ্রুত কাচারিবাড়িতে ছুটে যান। গিয়ে দেখেন খুঁটিতে হাত – পা বাঁধা। শুধু পানি পানি করছে। সেসময় গ্রামবাসী তাকে পানিও দেননি, চিকিৎসাও করায় নি। আবার তাঁর স্ত্রীকে সেবা যত্ন করতে দেননি।

এরপর রাত তিনটার দিকে যখন ফজলের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন এলাকাবাসী চলে যান। ভোররাতে স্ত্রী তাঁকে উদ্ধার করে পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এবং মরদেহটি নিয়ে তাঁর স্ত্রী সেনগ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে।

স্বজনরা আরো জানায়, প্রায় ১০ বছর আগে পাংশার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের মেঘনা গ্রামের ইরি শেখের স্ত্রী ও আব্দুল কাদের মোল্লার ছোট মেয়ে ইতি খাতুনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন ফজল। এই পক্ষের সাত বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। তারাই হয়তো ডেকে নিয়ে চোরের বদনাম নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন।

মেঘনা গ্রামবাসী জানায়, সোমবার রাতে এলাকার সামছুলের বাড়িতে কয়েকজন চোর অটোগাড়ির ব্যাটারি চুরি করছিল। এসময় ফজলকে হাতেনাতে ধরে কাঁচারিবাড়িতে বেঁধে রেখেছিল। এসময় কিছু গণপিটুনিও হয়। হয়তো ভয়ে স্ট্রোক করে মারা গেছেন।

এবিষয়ে নিহতের স্ত্রী নার্গিস খাতুন বলেন, ‘রাতে স্বামীকে কেউ একজন ফোন করে ডেকে নিয়ে যায়। পরে রাত একটার দিকে খবর পেয়ে ছুটে কাচারিবাড়ি গিয়ে দেখি স্বামী খুঁটির সাথে বাঁধা। বারবার পানি পানি করছে। চারিপাশে গ্রামবাসী ভিড় করে আছে। কিন্তু পানি খেতে দেননি। আমি পানি দিতে গেলে ও চিকিৎসার কথা বললে আমাকেও মারপিট করে তাঁরা। পরে রাত তিনটার দিকে যখন মরে যায়, তখন গ্রামবাসী চলে যায়। এরপর ভোররাতে পাংশা হাসপাতালে নিলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

তিনি আরো বলেন, ওই এলাকার আবু বক্কর, হোসেন, ইরি, সামছুলরা বেশি মারেছে। ওরা বারবার বলছিল মারে ফেল মারে ফেল। আমার স্বামী মেকারি, চোর নয়। তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। আমি এর বিচার চাই।

মঙ্গলবার সরেজমিন মেঘনা গ্রামে গিয়ে দেখি স্তব্দ পরিবেশ। অভিযুক্ত আবু বক্কর, হোসেন, ইরি, সামছুল পলাতক রয়েছেন। এবিষয়ে আবু বক্করের মা বলেন, ‘ রাতে চেঁচামেচি শুনে কাঁচারিবাড়িতে গিছিলাম। দেখলাম হাত পাও বাঁধা। হয়তো স্ট্রোক করে মারা গেছেন। কিন্তু আমার ছেলে – স্বামী (হোচেন) কেউ দায়ী নয়।

এব্যাপারে কাঁচারিবাড়ির মোশারফের ছেলে বিপুল হোসেন বলেন, রাতে সামছুলরা চোর ধরেছিল। গ্রামের লোকজন কাঁচারিবাড়িতে বেধে রেখেছিল। রাতে খুব ঝড় -বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই বাড়ি চলে গিছিলাম। আমি কোনো মারা দেখিনি। সকালে শুনলাম স্ট্রোক করে মারা গেছে চোর।

খোকসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ আশিকুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকালে সেনগ্রামের নিজবাড়ি থেকে ফজলের মরদেহ উদ্ধার পূর্বক সুরতহাল করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। চোর সন্দেহে এলাকাবাসী তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে জানা গেছে।

তিনি আরো বলেন, ঘটনা পাংশা থানায়। তাই মামলা সংক্রান্ত কার্যক্রম তারা করবেন। তবে ফজলের নামে থানায় কোনো চুরি বা অন্য মামলা নেই।

রাজবাড়ী জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (পাংশা সার্কেল) সুমন কুমার সাহা বলেন, খোকসা থানা পুলিশ মরদেহের সুরতহাল করে মর্গে পাঠিয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অটোচালক সামছুলের স্ত্রীকে আটক করা হয়েছে।

থেকে আরও পড়ুন

থেকে আরও পড়ুন